Header Ads

Breaking News
recent

আদিবাসী নির্যাতন এবং আমার ভাবনা-কানিজ ফাতেমা

kaniz fatema
কানিজ ফাতেমা
নিরাপত্তাজনিত কারণে দীর্ঘদিন ফেসবুকের বাইরে এবং একরকম আত্মগোপনে আছি। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধর্মীয় মৌলবাদের আগ্রাসন, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই জেল জুলুম মামলা হামলার ভয় সব মিলিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সংকটময় কাল অতিবাহিত করছে। এসব দেখে ফেসবুক ব্যবহারের ইচ্ছেটাও মরে গেছে। বুদ্ধিজীবিদের উপর (অবশ্যই সরকার পালিত শাহরিয়ার কবীর, মুনতাসির মামুনদের মতো মেরুদণ্ডহীন বুদ্ধিজীবিরা এই আওতার বাইরে)প্রকাশ্যে হেফাজতের হামলার হুমকি, সরকারের সমালোচনা করলেই সাতান্ন ধারায় মামলার হুমকি এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি কখনও দেখিনি।২০১৪ তে অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা দখলের পরপরই অবৈধভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন দল। এইসব দেখতে দেখতে অনেকটাই চুপচাপ হয়ে গেছি এখন। জেনে গেছি এইসব প্রতিবাদ, লেখালেখিতে আখেরে কোনও লাভ হবে না। এই দেশে আমাদের মতো ধর্মহীন এবং কোনও রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাবাহ অন্ধ সমর্থক নয় এমন মানুষের সংখ্যা বড়জোর ১%। সুতরাং আমাদের প্রতিবাদ এবং লেখালেখিকে সরকার গুণবে কেন? সরকারের কাছে এখন রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য কৌশলি সিদ্ধান্ত নেয়াটা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এবং সেটা হিসেবনিকেশ করেই তারা হেফাজতকে চটাতে চাইবে না। স্বীকার করি বা নাই করি এই ৯০% মুসলমানের দেশে মোটামুটি ৮০% লোক পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে হেফাজতের সমর্থন করে এবং অবৈধ সরকার এই বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী ক্ষেপিয়ে তাদের অগণতান্ত্রিক ভাবে দখল করা নড়বড়ে গদির বারোটা বাজাতে চাইবে না।
একটা দেশের মানুষের চিন্তাচেতনার প্রতিফলন হলো সেই দেশের সরকার। এই দেশের মানুষ জাতিগতভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ধর্মান্ধ। এই ধর্মান্ধ ভন্ড দুর্নীতগ্রস্ত জাতির জন্য এর থেকে ভালো কোনও রাজনৈতিক দল আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। এই দেশে দুর্নীতি শুধু যে রাষ্ট্রীয়ভাবে হয় তা তো নয়, ব্যক্তিগত দুর্নীতি এবং ক্ষমতার প্রদর্শনেও এই দেশ চ্যাম্পিয়ন হবে নিঃসন্দেহে।একদম ব্যক্তিগত ক্ষমতার অপব্যবহারের চিত্র আমরা প্রতিদিনই দেখি পত্রিকার পাতা খুললেই, প্রতিদিন গৃহস্থ কর্তৃক গৃহকর্মী নির্যাতনের খবরগুলো এর জলজ্যান্ত উদাহরণ। তো যেটা বলছিলাম, যে দেশের ৯০% মানুষ ধর্মান্ধ, দুর্নীতগ্রস্ত, এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের দোষে দুষ্টু সে দেশের সরকার তো তাদেরই চেতনা এবং শিক্ষার ধারক এবং বাহক হবে। তাই এখন চুপ থাকি, কথা বলি না পারতপক্ষে। কিন্তু গত কয়দিন থেকে আদিবাসীদের উপর ক্রমাগত অত্যাচার এবং নীপিড়নের বিভিন্ন খবর এবং ভিডিও চোখের সামনে পড়ে যাওয়ায় আর চুপ থাকতে পারলাম না। আমার ধারণা এগুলো দেখে কোনও বিবেকসম্পন্ন মানুষের পক্ষেই চুপ করে থাকা সম্ভব নয়।
জাতীয়তাবাদের ধারণা ধর্মীয় মৌলবাদের মতোই ভয়ংকর। এবং আধুনিক বিশ্বে এই ধারণা বাতিল ও পুরনো। কোনও মানবিক রাষ্ট্র কোনওদিনও একক জাতিসত্তায় বিশ্বাস রাখে না। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হওয়ার পর আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আদিবাসী ইস্যুতে বললেন, তোরা সব বাঙালি হয়ে যা। এর থেকে হাস্যকর কথা আর কি হতে পারে? একটা ভিন্ন জাতসত্তা কিভাবে বাঙালি হতে পারে? এটা তো এমন নয় যে, ইচ্ছা হলো আর আমি হিন্দু ধর্ম পরিত্যাগ করে মুসলমান হয়ে গেলাম। সেই পাকিস্তান আমল থেকে চলে আসছে আদিবাসীদের উপর হামলা এবং নির্যাতন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এদের বাঙালি হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আদিবাসীদের প্রতি করা অবিচার এবং বৈষম্যকে একরকম মৌখিক স্বীকৃতি দিলেন জাতির পিতা নিজ হাতে, যার ফলে উনি নিজেকে শুধু বাঙালি জাতির পিতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন। অথচ উনি তো শুধু বাঙালি জাতির জনক নন, উনি বাঙলাদেশে বসবাসরত প্রতিটি জাতি এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিটি নাগরিকের জনক হবেন এটাই কাম্য ছিলো। এরপর জিয়াউর রহমান এসে সেই পালে হাওয়া দিলেন। বাঙলাদেশী জাতীয়তাবাদের মতো আজব এক থিওরির জন্মদাতা ক্ষমতায় এসেই পাহাড়ে বাঙালি সেটেলারদের নানান ধরণের সুযোগ সুবিধা দিয়ে আদিবাসীদের নির্যাতনে একরকম রাষ্ট্রীয় সার্টিফিকেট দিয়ে দিলেন। প্রসঙ্গত,বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মধ্যে গুণগত পার্থক্য রয়েছে। মতবাদের দিক থেকে প্রথমটিকে বিদেশি প্রভাবিত এবং দ্বিতীয়টিকে ইসলাম প্রভাবিত মনে করা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তি বাঙলাদেশকে ইসলামীকরণ ও বাঙলাদেশী জাতীয়তাবাদের জনক হিসেবে ইতিহাস কোনওদিন জিয়াকে ক্ষমা করবে না।
সেটেলারদের আগ্রাসন নীপিড়ণকে প্রশাসন, রাষ্টযন্ত্র দ্বারা জাস্টিফিকেশন শুরু হয় জিয়ার আমল থেকে। এদের সামান্য প্রতিবাদটুকুও করতে দেয়া যাবে না এই মানসিকতা থেকে সেই স্বাধীনতার পর থেকেই আদিবাসীদের নিপীড়নের জন্য সরকার পোষ্য সেনাবাহিনী ভয়ংকরভাবে এদের দমন করছে। ভিডিও দেখলাম আজ।লংদুর ঘটনার পর সামান্য একটা প্রতিবাদ মিছিলে রাষ্ট্রীয় আজ্ঞাবহ সেনাবাহিনীর কুতসিৎ হামলার। মানে হলো, আপনি এদের অত্যাচার নীপিড়ন তো করবেনই সেই সাথে সামান্য প্রতিবাদ মিছিলেও হায়েনার মতো হামলে পড়বেন। এটা কি ধরণের কথা? সামান্য মিছিলও করতে দেয়া যাবে না?কি আশ্চর্য! এই ঘটনার সাথে আপনারা কি ইতিহাসের কোনও ঘটনার মিল পান? আমি কিন্তু এই ভিডিওতে আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পোষাক পরা একাত্তরের পাকহানাদারের প্রেত্মাতা দেখতে পেয়েছি।
যুগযুগ ধরে বাঙালির উপর হওয়া অত্যাচার এবং নীপিড়নের প্রতিবাদে বাঙালি যদি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে, আদিবাসীরা কেন তাদের অধিকার আদায়ে সশস্ত্র সংগ্রাম করলে আমি তাদের সমর্থন দিবো না? আমি যদি বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন একজন মানবিক মানুষ হই, আপনি যদি একজন বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন মানবিক মানুষ হন অবশ্যই আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে এবং তাদের প্রতিবাদে নৈতিক সমর্থন দেয়া আপনার এবং আমার কর্তব্য। আর কোনওভাবে না পারি অন্তত লিখে কিংবা মৌখিক সমর্থনও এদের মনোবল বৃদ্ধি করবে বলে আমি মনে করি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন অনেক শক্তিশালী। আমাদের আদিবাসী ভাই ও বোনেরা আপনারা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনাদের উপর হওয়া নীপিড়ন, অত্যাচারের চিত্র বেশি বেশি তুলে ধরুন। সরকার নিয়ন্ত্রিত মেইনস্ট্রিম মিডিয়া কখনওই আপনাদের নিউজ কভার করবে না। আপনারা সচেতন হন বেশি বেশি লিখুন এবং সোশ্যাল মিডিয়াকে পজিটিভলি ব্যবহার করুন।
স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত সকল সরকারের মনোভাব আদীবাসি ইস্যুতে এক। এর কারণ এরা বাঙালিদের বাঙলাদেশের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক এবং বাকিসব জাতিকে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক মনে করে। পাকিস্তান থেকে ভাগ হয়ে ঠিক যেন আরেক মিনি পাকিস্তান।এই লেখার পর অনেক দলকানা, এবং বাঙলাদেশী জাতীয়তাবাদের মিথ্যা অহংকারের ধ্বজাধারী উজবুক আমাকে এই চর, সেই চর, হেনতেন নানা উপাধিতে ভূষিত করবেন।লাভ নেই কোনও, আপনাদের জাতীয়তাবাদের মিথ্যা অহংকারকে আমি ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করি। আমি আমার বাঙালি পরিচয়ের জন্য বরং লজ্জিত।

বি:দ্র: অননুমোদিত ভাবে ছবি এবং পোস্ট কপি করার জন্য কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে! 

No comments:

Powered by Blogger.