Header Ads

Breaking News
recent

এম এন লারমার মৃত্যুর ৩৩ বছর পর সংসদে শোক প্রস্তাব!

জুম্ম জনগণের জাতীয় জাগরণের অগ্রদূত, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সাংসদ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার (এম এন লারমা) মৃত্যুর ৩৩ বছর পর জাতীয় সংসদে তাঁর ওপর শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রোববার বিকাল ৫:০০ ঘটিকায় দশম জাতীয় সংসদে দ্বাদশ অধিবেশনের প্রথম দিনের বৈঠকের শুরুতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শোক প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা গৃহীত হয়।
জাতীয় সংসদ

দীর্ঘ ৩৩ বছর পরে হলেও এম এন লারমার উপর শোক প্রস্তাব গ্রহণ করায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জাতীয় সংসদ ও সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। দীর্ঘ সময় পরে দশম জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনে শোক প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে ইতিহাসের এই গ্লানির অবসান ঘটেছে।
শোক প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে, “মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা মৃত্যুতে দেশ একজন বিশিষ্টি রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, শিক্ষক এবং নিবেদিত সমাজসেবককে হারালো। এ সংসদ তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ, তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।”
শোক প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, এম এন লারমা ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার খেদারছড়ার থুম এলাকায় ‘বিভেদপন্থী গিরি-প্রকাশ-দেবেন-পলাশ চক্র’ নামের একটি সশস্ত্র গ্রুপের আক্রমণে নিহত হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৪। স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের এবং ১৯৭৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে জাতীয় সংসদের স্বতন্ত্র সদস্য নির্বাচিত হন।
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (মঞ্জু) ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৩৮ সালে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট মৌজার মহাপুরম (বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের নিচে অবস্থিত) গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা চিত্ত কিশোর চাকমা সেই গ্রামের জুনিয়র হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তাঁর মা শুভাষিণী দেওয়ানও ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণা সমাজ হিতৈষীনি। এম এন লারমা চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয়। বড় বোন জ্যোতিপ্রভা লারমা (মিনু), বড় ভাই শুভেন্দু প্রভাস লারমা (বুলু), ছোট ভাই  জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু), যিনি ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’তে অন্যতম স্বাক্ষরকারী এবং যিনি বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের মাননীয় চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর ডাক নাম ‘মঞ্জু’।
রেওয়াজ অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য মারা গেলে তা সংসদের পরের অধিবেশনের প্রথম দিন শোক প্রস্তাব আকারে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এম এন লারমা মারা যাওয়ার পর কোনো শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি, যে কারণে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি সংসদের নথিতে নেই। বিষয়টি জাতীয় সংসদের নজরে আনেন রাঙামাটির স্বতন্ত্র সাংসদ উষাতন তালুকদার। পরে এই অধিবেশনে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি শোক প্রস্তাব আকারে গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।
এম এন লারমা ১৯৫৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে তিনিই কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করার চেষ্টা করেন। ১৯৬২ সালে তাঁর উদ্যোগে পাহাড়ি ছাত্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠন করে এর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি এই সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ১৯৭৩ সালে। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ এর ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে তাঁরই নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের একদল প্রতিনিধি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট ৪ দফা দাবি সম্বলিত আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানান। এম এন লারমা ১৯৭৫ সালে বাকশালে যোগদান করেন। তবে ১৯৭৭ ও ১৯৮২ সালে তিনি জনসংহতি সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।
রেওয়াজ অনুযায়ী শোক প্রস্তাবের একটি অনুলিপি এম এন লারমার পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠানো হবে।
জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সন্তোষ প্রকাশ করে। এত দিন পর মহান নেতা এম এন লারমার প্রতি শোক প্রকাশের জন্য জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা জাতীয় সংসদ ও সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এম এন লারমা কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের নেতা ছিলেন না। তিনি সারাদেশের এক খেটেখাওয়া মেহনতি মানুষের নেতা ছিলেন। জাতীয় সংসদের ভেতরে-বাইরে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অধিকারের পাশাপাশি দেশের মাঝি-মাল্লা, কৃষক-শ্রমিক, রিক্সাওয়ালা, নিষিদ্ধ পল্লীর নারী ইত্যাদি মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন।
উল্লেখ্য যে, সেদিন সাবেক সাংসদ ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য আবদুর রহিম, সাবেক সাংসদ আবদুল মান্নান, আলী রেজা রাজু, কুরবান আলী, ফজলুর রহমান পটল ও আবদুর রাজ্জাক খানের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া কবি শহীদ কাদরী, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী আ ফ ম মহিতুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের নেত্রী নাজমা রহমান, মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু মিতিল, কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলী, মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু সিডনি শনবার্গ, কৌতুক অভিনেতা ফরিদ আলী প্রমুখের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

No comments:

Powered by Blogger.