Header Ads

Breaking News
recent

মহিউদ্দীনের কুলখানিতে পদদলিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু!

মানুষ মারা গেলে তাদের স্মরণে মেজবান বা কুলখানির আয়োজন করা হয়। এসব আয়োজন কোন মাঠে বা খোলা স্থানে আয়োজন করা হয়। তবে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিনের কুলখানিতে এবারই হয়তো প্রথম কমিনিউটি সেন্টারে কুলখানির আয়োজন করা হয়েছে। আর এতেই বিপত্তি। পদদলিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়িতে রিমা কমিউনিটি সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। সেখানে কুলখানি উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য মেজবানের আয়োজন করা হয়েছিল। এই ঘটনায় আহত হয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের ‍১৪টি কমিনিউটি সেন্টারে এ মেজবানের আয়োজন করা হয়।

এ ঘটনায় পুরো চট্টগ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। চট্টগ্রাম সরকারি হাসপাতালে নিহতদের স্বজনদের আহজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতাল এলাকা। হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন আহতরা। এদের মধ্যে ২-৩ জনের অবস্থা আশঙ্কা। যারা এই কুলখানিতে এসে নিহত হয়েছে তাদের কুলখানি হবে কখন? এমন প্রশ্ন এখন সেখানে উপস্থিত সবার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি বন্দরনগরী চট্টগ্রামের স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মেজবান। একসঙ্গে একই সময়ে ১৪ স্থানে এত লোকের খাবারের আয়োজন আগে কখনো হয়নি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লাখো মানুষ আজকের মেজবানে অংশ নিয়েছে।

মেজবানে খাবারের তালিকায় আছে মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রিয় সাদাভাত, গরুর ঝালভুনা এবং নলা দিয়ে ছোলার ডাল। মুসলমান ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য থাকছে সাদাভাতের সঙ্গে ছাগলের মাংস ও নলা দিয়ে ডাল। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মানুষের জন্য ভাগ করে দেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট কমিউনিটি সেন্টার। দ্য কিং অব চিটাগাং কমিউনিটি সেন্টারে রয়েছে সবচেয়ে বড় আয়োজন।

নগরীর জিইসি মোড়ে কে স্কয়ার কনভেনশন সেন্টারের মেজবানে ১৩ নম্বর পাহাড়তলী, ১৪ নম্বর লালখান বাজার ও ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং আসকারদীঘি পাড় এলাকার রীমা কমিউনিটি সেন্টারে সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ অন্য ধর্মের মানুষ মেজবানে অংশগ্রহণ করেন।

চকবাজার এলাকায় কিশলয় কমিউনিটি সেন্টারে ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর, ১৬ নম্বর চকবাজার ও ২০ নম্বর দেওয়ানবাজার ওয়ার্ড, পাঁচলাইশ সুইস পার্ক কনভেনশন সেন্টারে ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী, ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড, লাভলেইন এলাকার স্মরণিকা ক্লাবে ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ি, ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি, ৩১ নম্বর আলকরণ, ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ড, মুরাদপুর এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টারে ৮ নম্বর শুলকবহর, ৪২ নম্বর নাসিরাবাদ এবং ৪৩ নম্বর আমিন শিল্পাঞ্চল ওয়ার্ড, কালামিয়া বাজার এলাকার কে বি কনভেনশন হলে ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর, ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া, ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া, ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ও ৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ওয়ার্ড, কাজির দেউরি ভিআইপি ব্যাংকুয়েটে ২১ নম্বর জামালখান ও ২২ নম্বর এনায়েতবাজার ওয়ার্ড, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড বেপারিপাড়া এলাকায় গোল্ডেন টাচ কমিউনিটি সেন্টারে ২৩ নম্বর উত্তর পাঠানটুলী, ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ, ২৮ নম্বর পাঠানটুলী, ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙা এবং ৩৭ নম্বর মুনিরনগর ওয়ার্ড, পাহাড়তলী পোর্ট কানেকটিং রোড অলংকার এলাকায় সাগরিকা কমিউনিটি সেন্টারে ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী, ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী, ১২ নম্বর সরাইপাড়া এবং ২৫ নম্বর রামপুরা ওয়ার্ড, স্টিল মিল এলাকার মুনভিউ কমিউনিটি সেন্টারে ৩৮ নম্বর দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর, ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা, ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ও ৪৪ নম্বর পূর্ব হালিশহর ওয়ার্ড এবং বহদ্দারহাট মৌলভীপাড় এলাকার চান্দগাঁও কমিউনিটি সেন্টারে ৩ নম্বর পাঁচলাইশ, ৪ নম্বর চান্দগাঁও ও ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের আজকের মেজবানে অংশ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।

জানা গেছে, চশমা হিলের বাসভবনে মেজবানে রান্নার দায়িত্বে মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রিয় বাবুর্চি মোহাম্মদ বাদশা। এছাড়া কিং অব চিটাগাং কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা থেকে আগত দলের শীর্ষ নেতা এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য মেজবানে রান্নার দায়িত্বে আছেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর আরেক প্রিয়ভাজন বাবুর্চি মোহাম্মদ হোসেন।

বাবুর্চি মোহাম্মদ হোসেন ও বাদশা গত ২৫ বছর ধরে মহিউদ্দিন চৌধুরীর উদ্যোগে নানা স্থানে আয়োজিত মেজবানে রান্না করে আসছেন।

তিনি প্রতিবছর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকীতে টুঙ্গিপাড়ায় মেজবান আয়োজনের জন্য ওই দুজনকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। চাটগাঁইয়া মেজবানের গরুভুনা, কালাভুনাসহ চৌধুরীর পছন্দের বিভিন্ন মুখরোচক খাবার রান্নায় পারদর্শী তাঁরা। মহিউদ্দিন চৌধুরীর বদৌলতে এ দুই বাবুর্চির খ্যাতিও চট্টগ্রামের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ‘চট্টলবীর’ মহিউদ্দিন চৌধুরী।

No comments:

Powered by Blogger.