বেলজিয়ামের ‘ইঞ্জিন অস্ত্র’ কেভিন ডি ব্রুইন
বেলজিয়ামের জার্সিতে:
ম্যাচ: ৬০
গোল: ১৪
বিশ্বকাপ ম্যাচ: ৪
বিশ্বকাপ গোল: ১
হোসে মরিনহোর নিশ্চয় এখন আক্ষেপের শেষ নেই। ঘরে এনেও যে ‘রত্ন’ চিনতে ভুল করেছিলেন পর্তুগিজ যুবরাজ! যাকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন তিনি, সেই কেভিন ডি ব্রুইনই এখন তার দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নগরপ্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টার সিটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।
মরিনহোরই বা কী দোষ! চেলসি ২০১২ সালে গেঙ্ক থেকে ডি ব্রুইনকে কিনে আনলেও ব্লুদের দ্বিতীয় মেয়াদের দায়িত্ব নিয়ে পর্তুগিজ কোচ তাকে ধারে পাঠিয়ে দেন ওয়ের্ডার ব্রেমেনে। এরপর স্থায়ীভাবে বিক্রি করে দেন আরেক জার্মান ক্লাব উলফসবুর্গে। তখনও ডি ব্রুইনের আলোকিত পারফরম্যান্সের দেখা মেলেনি। তবে বেলজিয়াম এই মিডফিল্ডারের প্রতিভা বুঝতে পেরেছিল ম্যানসিটি। ইংলিশ মিডিয়ায় গুঞ্জন আছে, সিটিজেনদের কোচ হওয়ার আগেই নাকি পেপ গার্দিওলা তাদের কিনতে বলেছিলেন ডি ব্রুইনকে।
ইংলিশ লিগে দ্বিতীয় দফায় যোগ দিয়ে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি বেলজিয়াম মিডফিল্ডারকে। ম্যানসিটির এবারের প্রিমিয়ার লিগ জেতার পথে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এবার মিশন জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ। এডেন হ্যাজার্ড, রোমেলু লুকাকু ও ড্রিস মের্টেনসের মতো তারকা খেলোয়াড়ের ভিড়েও বেলজিয়ামের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা ডি ব্রুইন।
প্রথমত, ম্যানসিটিতে দুর্দান্ত এক মৌসুম কাটিয়ে নামতে যাচ্ছেন রাশিয়ার আসরে। দ্বিতীয়ত, ‘রেড ডেভিলরা’ যে ফরমেশনে খেলে, ম্যানসিটিতেও সেই ৪-৩-৩ ছকে খেলেছেন গোটা মৌসুম। নিজের পজিশন বা দায়িত্ব একই থাকবে তার বেলজিয়াম দলে। অন্য সবার থেকে ডি ব্রুইনে আলাদা থাকার বড় কারণ, তিনি সব পজিশনেরই খেলতে পারেন। মাঝমাঠ থেকে যেমন বল জোগান দিতে পারেন, তেমনি উইংয়েও দুর্দান্ত। প্রয়োজনে যেমন গোল করতে পারেন, তেমনি রক্ষণে গিয়ে ডিফেন্ডারের সাহায্যও করতে দক্ষ। আর ডেড বলে তার কার্যকরী ফ্রি কিকের কথা অজানা থাকার কথা নয় কারও।
তারকা খেলোয়াড়ের ছড়াছড়ি বেলজিয়াম দলে। প্রত্যেকটি পজিশনে আছেন বিশ্বমানের সব খেলোয়াড়, সেটা যেমন রক্ষণে, তেমনি মাঝমাঠ কিংবা আক্রমণভাগ। অনেক দিন ধরে তারা একসঙ্গে খেলায় একে অন্যের সঙ্গে রসায়নও চমৎকার। আর এই জায়গাতেই বেলজিয়ামের ‘প্লাস পয়েন্ট’ ডি ব্রুইনের কাছ থেকে সেরাটা পাওয়ার। সতীর্থের কাছে ডিফেন্স চিড়া পাস দিতে তিনি দ্বিতীয়বার ভাবেন না, পজিশন পাল্টে খেলতেও পারদর্শী। লং পাস কিংবা ছোট পাসে তার জুড়ি নেই। জাতীয় দলের সতীর্থরাও খুব ভালো করে জানেন তার সামর্থ্য। তাই বল দেওয়া-নেওয়ার বেলায় না দেখেও একে-অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে যায় তাদের।
ব্রাজিল বিশ্বকাপে খেলেছেন তরুণ ও অনভিজ্ঞ ডি ব্রুইন। রাশিয়ার আসরে নামতে যাচ্ছেন তিনি পরিণত ও অভিজ্ঞ হয়ে। ক্লাব ফুটবলে ম্যানসিটির জার্সিতে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে এসেছেন, এবার পালা বিশ্ব মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের। আগের বিশ্বকাপ কিংবা ২০১৬ সালের ইউরোতে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি ডি ব্রুইন। তাই বেলজিয়ামও যেতে পারেনি বেশি দূর। অতীতের হতাশা ঝেরে নতুন আলোতে আলোকিত হতে চান ২০১৮ সালের ফুটবল মহাযজ্ঞে।
বেলজিয়ামে তারকা খেলোয়াড়ের অভাব নেই, এবং সবাই পরীক্ষিত। তবে মাঠমাঝ কিংবা পজিশন পাল্টে আক্রমণভাগে যেভাবে বল জোগান দিতে পারেন ডি ব্রুইন, তাতে তার ওপরই নির্ভর করছে বেলজিয়ামের বিশ্বকাপ দৌড়।
একনজরে:
পুরো নাম: কেভিন ডি ব্রুইন
জন্ম: ২৮ জুন ১৯৯১
পজিশন: মিডফিল্ডার
ক্লাব: ম্যানচেস্টার সিটি
উচ্চতা: ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি
No comments: