Header Ads

Breaking News
recent

আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস কি, কেন এবং কারা আদিবাসী?


১৯৮২ সালের ৯ আগষ্ট সর্ব প্রথম রাষ্ট্রসংঘে আনুষ্ঠানিকভাবে আদিবাসী বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু হয়। সেদিন আদিবাসীদের নিয়ে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রসংঘের “আদিবাসী বিষয়ক ওয়াকিং গ্রুপ” এর প্রথম সভা হয়। আদিবাসীদের মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার প্রসার ও সংরক্ষণ এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত আর্ন্তজাতিক মান নির্ধারণ করা ছিল মূল উদ্দেশ্য। স্মরণীয় এ দিনটিকে কেন্দ্র করে ১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ৯ই আগষ্টকে “আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস” হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

 বিশ্বের বিভিন্ন দেশে র্দীঘ দিন অবহেলিত, সুযোগ বঞ্চিত ও নানা ধরণের সমস্যায় জর্জরি আদিবাসী জাতিসমূহের জন্য এবং তাদের সমস্যাগুলোর প্রতি সরকার, অন্যান্য বেসরকারী সংগঠন ও সচেতন সমাজ কর্তৃক বিভিন্ন র্কাযক্রম হাতে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া।

 বিশ্বের ৫টি মহাদেশের ৭০টিরও বেশী দেশের কমপক্ষে ৫০০০টির বেশী আদিবাসী জাতি রয়েছে। যার জনসংখ্যা প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন অর্থাৎ বিশ্বের জনসংখ্যার ৫%। গবেষণায় দেখা গেছে , আদিবাসীরা সবাই মিলে বিশ্বের ২০% এর বেশী ভূ-পৃষ্ঠ দখল করে আছে। ৮০% এর বেশী সাংস্কৃতিক ও জীববৈচিত্র্য প্রতিপালন এবং রক্ষা করে আসছে। তাহলে এরা কারা? আদিবাসী বা “Indigenous peoples” বলতে কাদের বোঝায়?

 এর র্সাবজনীন কোন সংজ্ঞা নেই। কেননা এর একটা সংজ্ঞা দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা আদিবাসীদের বৈচিত্র্যতাকে তুলে ধরা যাবে না। তবে আদিবাসী শব্দের মত আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে আরো অনেক শব্দ আছে, যেমন-“Peoples’’ ও ‘সংখ্যালঘু’ ইত্যাদি শব্দগুলিও রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন আইনগুলোতে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। তাই আদিবাসী কারা তা জানার জন্য সংজ্ঞার বদলে সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য উপায় হলো আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের ইনডিকেট করা।



নিম্নে তেমনি কিছু তথ্য তুলে ধরা হল-

রাষ্ট্রসংঘের  মানবাধিকার বিষয়ক Sub-Commission-এর Special Rapporteur Mr. Jose Martinez Cobo-এর গবেষণা বিষয়ক মতামত: “আদিবাসী বা Indigenous Communities, Peoples ও Nations  হল ওরা, যাদের প্রাগ্-আগ্রাসন ও প্রাগ্-উপনিবেশিক সমাজগুলির সাথে একটা ঐতিহাসিক ধারাবাহিক সর্ম্পক আছে, এ সর্ম্পক তাদের ভূ-খন্ডের উপর গড়ে উঠেছে এবং ঐ ভূ-খন্ডের মধ্যে বর্তমান সমাজের অন্যান্য সেক্টরগুলি থেকে তাদেরকে স্বাতন্ত্র্য বা অংশ হিসেবে মনে করে। তারা বর্তমানে নিজেদের সমাজে নিজেদের মধ্যে অনাধিপত্যমূলক সেক্টর গঠন করে এবং তারা তাদের পৌরাণিক ভূ-খন্ডগুলি রক্ষা ও Peoples হিসেবে নিজস্ব সাংস্কৃতিকে বৈশিষ্ট্য, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও আইনগত পদ্ধতিগুলির সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাদের ধারাবাহিক অস্তিত্ব রক্ষা করছে ও তাদের জাতিগত পরিচিতি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে স্থানান্তর করতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।” [E/CN.4/Sub.2/1986/(1983)]


 বিশ্ব শ্রম সংস্থার কনভেনশন ১৬৯ (অনুচ্ছেদ-১. (খ)) এ সংজ্ঞানুসারে আদিবাসী বলতে-
-যাদের উৎপত্তি একটা জনগোষ্ঠী হতে যারা একটা দেশের বা দেশের মধ্যে একটা ভৌগোলিক অঞ্চলের বাসিন্দা;
-যারা ঐ অঞ্চল আবিষ্কারের সময় হতে বা ঔপনিবেশিক বা বর্তমান রাষ্ট্রসীমা গঠিত হবার আগে হতে বসবাস করে আসছে; এবং
-যাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু ক্ষেত্রে আইনগত অথবা পূর্ণাঙ্গভাবে বৈধতা রয়েছে।

 এছাড়া বহু আগে থেকেই সরকারী বিভিন্ন দলিলপত্রে ও ‘আদিবাসী’’ বা ‘Indigenous’’ শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যেমন-পার্বত্য চট্রগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০ সালের বিভিন্ন (ধারা নং-৪,৬,৩৪,৪৫,৫০) পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের ‘Indigenous Hillmen/Indigenous Tribes’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে।

 Indigenous হিসেবে ILO Convention ১০৭-এ স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ এটা অনুস্বাক্ষর করেছে। সেখানে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ সাধন ও তাদের মান উন্নয়নের জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো দায়িত্ব পালন করবে বলে
স্বীকার করা হয়।

 আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বা বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাকালীন মাননীয় শেখ হাসিনা (২০০০,২০০৩,২০০৬,২০০৯) এবং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মাননীয় বেগম খালেদা জিয়া (২০০৩) ‘আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবসে’ বাংলাদেশের আদিবাসীদেরকে ‘আদিবাসী’ অভিহিত করে বাণী ও প্রদান করেন।

 পরিশেষে আসুন আমরা আদিবাসী দিবসকে সবাই মিলে উৎসাহের সহিত পালন করি ও আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ে সচেতন হই। আদিবাসীরা এগিয়ে গেলেই দেশ এগিয়ে যাবে।  (তথ্য সূত্র:আদিবাসী ধারণা, আদিবাসী ফ্যাসিলিটেটরস্ গ্রুপ, রাঙ্গামাটি।)

No comments:

Powered by Blogger.