Header Ads

Breaking News
recent

নায়ক রাজ রাজ্জাক আর নেই!

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
razzak

সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কিংবদন্তি এ অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে হার্ট অ্যাটাক হওয়া অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব ধরনের চেষ্টা করেও তাকে বাঁচিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়। তাকে শেষবারের মত দেখতে হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন অসংখ্য গুণগ্রাহী ও ভক্তরা।

রাজধানীর গুলশানে তার নিজ বাসা লক্ষ্মীকুঞ্জে বিকেল ৫ টায় ব্যথা অনুভব হলে তিনি নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে হাসপাতালে যান। হাসপাতালে পৌঁছলে তাকে ইমারজেন্সিতে নেয়া হয়। পরে ৬টা ১৩ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতার টালিগঞ্জে রাজ্জাকের জন্ম। প্রকৃত নাম আবদুর রাজ্জাক। টালিগঞ্জের মোল্লা বাড়িতে আকবর হোসেন ও মিনারুন্নেসার কোলে জন্ম তার। মাত্র ১৯ বছর বয়সে ১৯৬২ সালে বিয়ে করেন লক্ষীকে। ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে পরিবার নিয়ে ঢাকায় আসেন রাজ্জাক।

এর পর জড়িয়ে পড়েন চলচ্চিত্রে। দু’একটা সিনেমায় ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করার পর ৬৭ সালে মুক্তি পায় নায়ক হিসেবে তার প্রথম ছায়াছবি বেহুলা। সেই থেকে শুরু। ষাটের দশকের বাকি বছরগুলোতে এবং সত্তরের দশকেও তাঁকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রধান অভিনেতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

সংসারে তিন পুত্র এবং এক কন্যা সন্তান। মেয়ে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দুই পুত্র বাপ্পারাজ এবং সম্রাট সিনেমায় অভিনয় করেন।

একনজরে নায়করাজ:

বাংলা চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন নায়করাজ রাজ্জাক। দু্-একটি ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের পর জহির রায়হানের ‘বেহুলা’য় পূর্ণাঙ্গ নায়ক হিসেবে সুপারহিট। এরপর বাংলা চলচ্চিত্রের এ রোমান্টিক নায়কের আর পেছন ফিরতে হয়নি। নিজে যেমন এগিয়েছেন, পথ দেখিয়েছেন চলচ্চিত্র শিল্পকেও।

স্কুলে পড়ার সময় ‘বিদ্রোহ’ নাটক আর কলেজ জীবনে ‘রতন লাল বাঙ্গালি’ ছায়াছবিতে তার প্রথম অভিনয়। ১৯৫৯ সালে বোম্বের ফিল্মালয়ে ভর্তি হন। এরপর কলকাতার ‘পংকতিলক’ এবং ‘শিলালিপি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়।

ঢাকায় এসে যোগাযোগ করেন ‘মুখ ও মুখোশ’-এর পরিচালক আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে। তিনি রাজ্জাককে ওই সময়ের বিখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা ইকবাল ফিল্মসে চাকরি নিয়ে দেন। পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী পরিচালক হিসেবে রাজ্জাকের প্রথম ছবি ‘উজালা’। সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি ‘১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন’, ‘আখেরী স্টেশন’ ও ‘ডাক বাবু’ ছবিতে তিনটি ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন রাজ্জাক।

বরেণ্য চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের সহকারী হিসেবেও কাজ করেন তিনি। জহির রায়হানই রাজ্জাককে ‘বেহুলা’ ছবির পূর্ণাঙ্গ নায়কের চরিত্রে অভিনয় করান। ‘বেহুলা’র নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন সুচন্দা। ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায় ‘বেহুলা’।

ছবিটি সুপারহিট হলে রাজ্জাক তার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পান। ঢাকার চলচ্চিত্র পায় একজন রোমান্টিক নায়ক, যিনি পরবর্তীকালে বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পের ত্রাণকর্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র অবুঝ মন (শাবানা), চোর (শবনম), নাচের পুতুল (শবনম), নীল আকাশের নিচে (কবরী), বড় ভাল লোক ছিল, বেঈমান (কবরী), ময়নামতি (কবরী), মনের মতো বউ (সুচন্দা), রংবাজ (কবরী), লাইলি মজনু (ববিতা), সঙ্গীতা (কবরী), জীবন থেকে নেয়া (সুচন্দা) ইত্যাদি।

এ পর্যন্ত মোট পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন রাজ্জাক। ছবিগুলো হলো, কি যে করি (১৯৭৬), অশিক্ষিত (১৯৭৮), বড় ভালো লোক ছিল (১৯৮২), চন্দ্রনাথ (১৯৮৪) ও যোগাযোগ (১৯৮৮)।

অভিনয়ের পাশাপাশি নায়করাজ রাজ্জাক ১৯৭৬ সালে ‘আশঙ্কা’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। গড়ে তোলেন প্রযোজনা সংস্থা এমএস প্রোডাকশন। এ পর্যন্ত ২০টি চলচ্চিত্র প্রযোজনা এবং পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র। সর্বশেষ তিনি ‘আয়না কাহিনী’ ছবিটি নির্মাণ করেন।

No comments:

Powered by Blogger.